| মঙ্গলবার, ১১ এপ্রিল ২০২৩ | প্রিন্ট | 14 বার পঠিত
বাঙালি সমাজ যখন ধর্মীয় প্রতিবন্ধকতা আর সামাজিক কুসংস্কারে আচ্ছন্ন ছিল, সেই সময় বেগম রোকেয়া বাংলার মুসলিম নারী সমাজে শিক্ষার আলো নিয়ে এসেছিলেন। বাঙালি মুসলমান নারী জাগরণের তিনি ছিলেন অন্যতম একজন পথিকৃৎ। তিনি বাঙালি মুসলিম নারী জাগরণের অগ্রদূত এবং প্রথম বাঙালি নারীবাদী।
বাঙালির আধুনিক যুগের ইতিহাসে যে নারীর নাম গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয় সেই নাম হচ্ছে রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন – বেগম রোকেয়া।
বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন জন্মগ্রহণ করেন ১৮৮০ সালের ৯ই ডিসেম্বর রংপুর জেলার পায়রাবন্দ গ্রামে। তার বাবা একজন শিক্ষিত জমিদার ছিলেন।
মেয়েদের শিক্ষার ব্যাপারে তাঁর পরিবার ছিল খুবই রক্ষণশীল। মেয়েদের লেখাপড়া শেখানোর কোনো চল ছিল না। আর তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থায় ঘরের বাইরে গিয়ে মেয়েদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষালাভেরও কোন সুযোগ ছিল না।
পাঁচ বছর বয়সে মায়ের সঙ্গে কলকাতায় বসবাস করার সময় একজন মেম শিক্ষয়িত্রীর কাছে তিনি কিছুদিন লেখাপড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু সমাজ ও আত্মীয়স্বজনদের ভ্রুকুটির জন্য তাও বন্ধ করে দিতে হয়। তবু রোকেয়া দমে যাননি। বড় ভাই-বোনদের সমর্থন ও সহায়তায় তিনি বাংলা, ইংরেজি, উর্দু, ফার্সি এবং আরবি আয়ত্ত করেন।
১৮৯৮ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে বেগম রোকেয়ার বিয়ে হয় বিহারের ভাগলপুর নিবাসী উর্দুভাষী সৈয়দ সাখাওয়াৎ হোসেনের সঙ্গে। তিনি ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট, তদুপরি সমাজসচেতন, কুসংস্কারমুক্ত এবং প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন।
“তাঁর স্বামী ছিলেন খুব উদার মনের মানুষ এবং খুবই শিক্ষিত ব্যক্তি। বেগম রোকেয়া কিছুটা উর্দু তো আগেই শিখেছিলেন। বিয়ের পর সেই শিক্ষা তাঁর উর্দুভাষী স্বামীর সহায়তায় আরও প্রসার লাভ করল। এবং স্বামীর কাছ থেকে ইংরেজিতে খুব ভাল দক্ষতা অর্জন করলেন। সুন্দর ইংরেজি রচনা করতে পারতেন তিনি।”
বেগম রোকেয়ার সাহিত্যচর্চ্চার সূত্রপাতও হয়েছিল স্বামীর অনুপ্রেরণায়। তাঁর সাহিত্যজীবন শুরু হয় ১৯০২ সালে ‘পিপাসা’ নামে একটি বাংলা গদ্য রচনার মধ্যে দিয়ে। তাঁর উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মের মধ্যে ছিল প্রবন্ধ সংকলন ‘মতিচুর’ এবং বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি ‘সুলতানার স্বপ্ন’।
তাঁর ‘সুলতানার স্বপ্নকে’ বিশ্বের নারীবাদী সাহিত্যের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসাবে ধরা হয়।
তবে বেগম রোকেয়ার বিবাহিত জীবন বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ১৯০৯ সালের ৩ মে সাখাওয়াৎ হোসেন মারা যান।
কিন্তু স্বামীহারার এই বিচ্ছেদ রোকেয়াকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। একই বছরে ১ অক্টোবর রোকেয়া ভাগলপুরে প্রতিষ্ঠিত করেন ’সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল’। মাত্র ৫ জন ছাত্রী নিয়ে ’সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুলের’ যাত্রা শুরু হয়। বোরখা পড়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে ছাত্রী সংগ্রহ করতে লাগল রোকেয়া। সেই অবস্থায় মেয়েদের স্কুল প্রতিষ্ঠা একরকম দুঃসাধ্য সাধন বললেই চলে; কিন্তু রোকেয়া হার মানেননি। এমনকি সমাজের চক্ষুশূল হওয়ার পরও তিনি সমাজের নারীদের জন্য কাজ করে গেছেন।
স্কুলটি তিনি প্রথম শুরু করেন ভাগলপুরে ১৯০৯ সালের পয়লা অক্টোবর। তারপর পারিবারিক কারণে বেগম রোকেয়া ভাগলপুর ছেড়ে কলকাতায় এসে বসবাস শুরু করেন এবং ১৯১১ সালের ১৬ই মার্চ কলকাতার ১৩ নং ওয়ালিউল্লাহ লেনের একটি বাড়িতে নতুন পর্যায়ে প্রতিষ্ঠা করেন ‘সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল’। যেটি আজ কলকাতার একটি নামকরা মেয়েদের সরকারি স্কুল –’সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গালর্স হাই স্কুল।’
১৯১৬ সালে তিনি মুসলিম নারীদের সংগঠন ’আঞ্জুমানে খাতিয়ানে ইসলাম’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৩০ সালে বঙ্গীয় মুসলিম সম্মেলনে রোকেয়া বাংলা ভাষার পক্ষে জোরালো বক্তব্য রাখেন; যা সে যুগের পরিপ্রেক্ষিতে নারীদের জন্য ছিল দুঃসাহসিক কাজ।
পুরুষশাসিত সমাজের আচার অনাচার কুসংস্কার ও গোঁড়ামির বিরুদ্ধে আজীবন সংগ্রাম করেছেন বেগম রোকেয়া। মুসলিম মেয়েদের প্রগতির জন্য তিনি সারা জীবন কাজ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন মেয়েদের সাবলম্বী হবার পথে, মুক্তির পথে শিক্ষার বিকাশই আসল রাস্তা।
১৯৩০ সালের দিকে রোকেয়ার শরীর ভেঙে পড়তে থাকে, নানা রোগে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাঙালি নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার জীবনাবসান হয় ১৯৩২ সালের ৯ই ডিসেম্বর।
Posted ৫:৪১ এএম | মঙ্গলবার, ১১ এপ্রিল ২০২৩
| admin
এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।